Blog

ব্রণের চিকিৎসায় ১০ টি বিষয় জানা জরুরি
By Dr. Shusama RezaLike [0], Comment [0]
ব্রণের চিকিৎসায় ১০ টি বিষয় জানা জরুরি
ব্রণের চিকিৎসায় ধৈর্য ও সঠিক যত্ন অপরিহার্য। সুস্থ ত্বকের জন্য ব্রণের চিকিৎসায় ১০টি বিষয় জানা জরুরি! যা ব্রণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ব্রণের চিকিৎসায় ১০ টি বিষয় জানা জরুরি—এই ব্যাপারটা যদি আগে জানতেন, তাহলে হয়তো এত সমস্যায় পড়তে হতো না! ব্রণ মানেই শুধু ত্বকের সমস্যা নয়, এটি আত্মবিশ্বাসেও বড় ধাক্কা দিতে পারে।
অনেকে ভুল পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে আরও বিপদ ডেকে আনেন। আজ আপনাকে জানাবো ব্রণের চিকিৎসার সঠিক পথ, যাতে ভুল না করে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। আপনার ব্রণ যদি লম্বা সময় ধরে থাকে,
তাহলে এই ১০টি বিষয় জানা একেবারে জরুরি!
ব্রণ দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তাই ধৈর্য ধরতে হবে
অনেকেই মনে করেন, ব্রণ এক-দুই দিনের মধ্যে সেরে যাবে, কিন্তু বাস্তবে এটি সময়সাপেক্ষ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন 'Quick Fix' আশা করা যাবেনা।
চিকিৎসা শুরু করার পরও ব্রণ একেবারে চলে যেতে ৮-১২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। অনেক সময় ঘরোয়া প্রতিকার বা ভুল ওষুধ ব্যবহার করলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
তাই বিভিন্ন জনের কাছে শুনে বিভিন্ন জিনিস মুখে লাগিয়ে, স্কিনে ক্যামিকেল টর্চার করা সবার আগে বন্ধ করতে হবে।
চিকিৎসার ধরন ব্রণের তীব্রতা ও ধরণের ওপর নির্ভর করে
সব ব্রণের চিকিৎসা একরকম হয় না। ব্রণ এর চিকিৎসা এর তীব্রতা এবং ব্রণের ধরনের উপর নির্ভর করে।
মূলত ট্রিটমেন্ট মডালিটি হিসেবে এই তিন ধরনের চিকিৎসা সচরাচর করা হয়ে থাকে—
- এন্টিবায়োটিক থেরাপি — ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমায়।
- হরমোনাল থেরাপি — বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনজনিত ব্রণের জন্য কার্যকর।
- রেটিনয়েড থেরাপি — ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং ব্রণ কমায়।
নিজে থেকে ওষুধ বেছে না নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
দীর্ঘমেয়াদী এন্টিবায়োটিক থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে
মানুষের শরীরের হাতে গোণা অল্প কিছু রোগ আছে যেসব ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়। ব্রণ তার একটি।
অনেকেই ভাবেন, কয়েক দিন এন্টিবায়োটিক খেলেই ব্রণ চলে যাবে। কিন্তু বাস্তবে
কোন কোন ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ৩-৬ মাসের জন্যেও সেবন করতে হতে পারে। এটি শরীরের ভেতর থেকে সংক্রমণ কমিয়ে ব্রণের মূল কারণ দূর করতে সাহায্য করে। তবে ভুলভাবে ওষুধ খেলে এন্টিবায়োটিক
রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই এন্টিবায়োটিক শুরু বা বন্ধ করবেন না।
ওষুধের কার্যকারিতা দেখতে সময় লাগে
ব্রণ দূর করতে রাতারাতি কোনো ম্যাজিক নেই! ওষুধ শুরুর পরেই যেকোন রোগে বোঝা যায় যে ওষুধ রেসপন্স করছে কি করছে না। ব্রণের ক্ষেত্রে সেটা হয় না।
অনেকেই কয়েক দিন ওষুধ খেয়ে কোনো পরিবর্তন না দেখে হতাশ হন এবং চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। কিন্তু বাস্তবে, ৮-১২ সপ্তাহ এক নাগারে কোন ওষুধ লাগানো বা
খাওয়া শেষে বলা যাবে, যে ওষুধটা কার্যকর নাকি অকার্যকর। এর আগে নয়। রেসপন্স স্লো মানেই ওষুধ অকার্যকর ব্যাপার সেটা নয়। তাই ধৈর্য ধরুন, চিকিৎসা চালিয়ে যান।
ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করা উচিত নয় কেন
কোন ওষুধে উপকার বুঝলে চট করে ডোজ কমানো বা ওষুধ বন্ধ করা যাবেনা। এতে সমস্যা আরও বেড়ে যায়! ধীরে ধীরে কয়েক মাসে ডোজ কমিয়ে বন্ধ করতে হবে। নতুবা আবার ব্রণ ফেরত আসবে,
এবং ত্বক আগের চেয়েও খারাপ হতে পারে।
ধাপে ধাপে চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি কেন
ত্বকের অবস্থা একদিনে পরিবর্তন হয় না। তাই ব্রণের চিকিৎসা 'স্টেপ ওয়াইজ' করা হয়ে থাকে। প্রতি ভিজিটে অবস্থা বুঝে চিকিৎসা নির্ধারণ করতে হয়।
ঘন ঘন ওষুধ না বদলে ডোজ অপটিমাইজেশন বেশি কার্যকর। ডাক্তার ওষুধ বদলান না দেখে ডাক্তারই বদলে ফেলা যাবে না। ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার এন্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স করে। ব্রণ সারে না।
মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্রণের সঙ্গে অনিয়মিত মাসিক থাকলে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন
আপনি কি জানেন! আমাদের শরীরের হরমোনগুলোই ব্রণের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে, আর মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনের পরিবর্তন ব্রণ আরও তীব্র করতে পারে।
একজন মেয়ের ক্ষেত্রে ব্রণ এর সাথে যদি অনিয়মিত মাসিক এবং শরীরে অবাঞ্চিত লোম এর হিস্ট্রি থাকে, তবে ব্যাপারটিকে বাড়তি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে তিনি PCOS বা পলি সিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নামক রোগে ভুগছেন কীনা সেটা মিলিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে ব্রণের চিকিৎসায় হরমোনাল থেরাপি জরুরী হয়ে পড়ে।
কসমেটিকস ও হার্বাল প্রোডাক্ট ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
আমরা অনেক সময় ত্বকের যত্নে কসমেটিকস বা হার্বাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করি, কিন্তু কিছু প্রসাধনীতে এমন সব রাসায়নিক থাকে যা ত্বক আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বিভিন্ন কসমেটিকস এবং হার্বাল প্রোডাক্টে স্টেরয়েডের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বা ক্ষতিকর ক্যামিকেল এর উপস্থিতি থাকে।
আগে ভাল ছিলেন, এগুলো ব্যবহারের পরে বেড়েছে এরকম হলে শুরুতেই স্কিন এসেসমেন্ট করানো জরুরী।
চিকিৎসা না নিলে দাগ ও স্কার হওয়ার ঝুঁকি থাকে
ব্রণের ট্রিটমেন্টে দেরি করলে দাগ বসে যাবার এবং স্কার বা গর্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। আর এটা ব্রণ সেরে যাওয়ার পরেও অনেকদিন ধরে থাকে।
আপনি যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নেন, তাহলে ব্রণের দাগ স্থায়ী হতে পারে।
সাধারণত ২৫ বছর বয়সের মধ্যে ব্রণ সেরে যায়
ব্রণ সাধারণত ১৫-১৮ বছর বয়সে শুরু হয়, কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ২৫ বছর বয়সের মধ্যে সেরে যায়। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটা একটু বেশি সময় নিতে পারে,
কিন্তু সাধারণত এ বয়সের মধ্যে ব্রণ কমে যায়। তাই চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যান, আর সঠিক যত্ন নিন, কিছু সময় পরেই আপনার ত্বকও ফিরে আসবে স্বাভাবিক অবস্থায়।
উপসংহার
ব্রণের চিকিৎসায় ১০টি বিষয় জানা জরুরি, আর এই বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকলে আপনি অনেক আগেই সমস্যার সমাধান পেতে পারেন।
মনে রাখবেন, ব্রণ শুধু একটি ত্বকের সমস্যা নয়,এটি আত্মবিশ্বাসেও বড় ধাক্কা দিতে পারে। তবে ধৈর্য এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাই, নিয়মিত চিকিৎসা,
চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সঠিক যত্ন গ্রহণ করুন, এবং ব্রণের সমস্যা আর আপনাকে ঘিরে থাকবে না।
Posted Comment Login to Like or Comment